ইবি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) লালন শাহ হলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরূদ্ধে এক আবাসিক ছাত্রকে জোরপূর্বক হল থেকে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত ৩০ মার্চ সন্ধ্যার দিকে লালন শাহ হলে এ ঘটনা ঘটে।
এসময় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ভুক্তভোগী ছাত্রকে ‘আবাসিকতার কাহিনী বাদ দে, আমরা যা বলবো হলে তাই হবে’ বলে ভুক্তভোগী ছাত্রকে তার আবাসিকতায় উল্লেখিত সিট থেকে নেমে যেতে বলেন। তবে এর আগেই ভুক্তভোগীর বই, খাতা, তোষক, বালিশ রুমের বাইরে করিডরে ফেলে রাখা হয় বলে জানা গেছে।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হলেন- সিদ্দিক (পরিসংখ্যান ২০১৬-১৭), তরিকুল ইসলাম তরুণ (বাংলা ২০১৬-১৭) ফাহিম ফয়সাল (ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ ২০১৭-১৮) ও আতাউর রহমান রাজু (বাংলা ২০১৮-১৯)। তারা সবাই শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের অনুসারী।
এ নিয়ে ভুক্তভোগী ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মাহাদী হাসান আবাসিক কক্ষে থাকা নিশ্চিত করে তদন্ত সাপেক্ষে হয়রানির ব্যবস্থা ও নিরাপত্তার দাবিতে হল প্রভোস্ট এবং উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
লিখিত অভিযোগে মাহাদী হাসান বলেন, ‘আমি আমার আবাসিকতাপ্রাপ্ত কক্ষে (৪২৮ নম্বর কক্ষ) বিগত কিছুদিন ধরে অবস্থান করছিলাম। বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) সন্ধ্যায় সিদ্দিক ভাই (পরিসংখ্যান ২০১৬-১৭) এর মাধ্যমে তরুণ ভাই (বাংলা ২০১৬-১৭) ফাহিম ফয়সাল ভাই (ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ ২০১৭-১৮) ও রাজু ভাই (বাংলা ২০১৮-১৯) আমাকে হলে আসতে বলেন।
আমি তখন ইফতার শেষ করে নামাজের জন্য যাচ্ছিলাম। ফোন পেয়ে আমি দ্রুত হলে চলে আসি। সেখানে পৌঁছে দেখতে পাই আমার বই, খাতা, তোষক বালিশ রুমের বাইরে করিডোরে পড়ে আছে। আমাকে ৪২৭ নম্বর কক্ষে যেতে বলা হয়েছিল।
সেখানে আগে থেকেই তরুণ ভাই, ফাহিম ভাই, রাজু ভাইসহ আরও একজন ভাই উপস্থিত ছিলেন। আমি সালাম দিয়ে কক্ষে প্রবেশ করি। প্রথমে ফাহিম ভাই আমাকে বলেন তুই মাহাদী- আমি হ্যাঁ বলি। তারপর আমাকে বলে তুই কোন কক্ষে থাকিস? আমি বলি ৪২৮ আমার আবাসিক কক্ষ আমি ওই কক্ষেই আমার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে অবস্থান করছি।
তখন ফাহিম ভাই বলে আগে কোথায় ছিলি? আমি বলি ৩০৮ নম্বর এ মেহেদী হাসান তানভীর-এর অতিথী হিসেবে ছিলাম। এখন আমার কক্ষ (৪২৮) বরাদ্দ হইছে আমি এখানেই থাকব। আমি এটা বলার সঙ্গে সঙ্গেই রাজু ভাই আমাকে ধমক দিয়ে বলে তুই কে! তোকে আগে কখনও হলে দেখিনি তো। কে তোরে হলে তুলেছে? আর ওইসব আবাসিকতার কাহিনী বাদ দে আমরা যা বলবো হলে তাই হবে। তখন তরুণ ভাই বলে আমারে চিনিস তুই আমি কে? এখনও ভালোই ভালোই ৪২৮ থেকে সবকিছু নিয়ে কোথায় যাবি যা ৩০৮ এ থাকবি নাকি কোথায় থাকবি আমরা জানিনা।
এইটা বলার পর ইতোমধ্যে রুমের বাইরে করিডোরে ফেলে দেওয়া আমার বই খাতা, তোষক, বালিসসহ আমার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দিকে ইঙ্গিত করে বলে এইখানে তোর সবকিছু আছে নিয়ে চলে যাস।
অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মী ফাহিম ফয়সাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা তাকে হল থেকে বের করিনি। বরং মাহাদী ৩০৮ নম্বর রুমে প্রায় দুই বছর ধরে থাকে অন্য একজনের আবাসিক সিটে। ওই আবাসিক সিটের ছেলেকে যখন ৪২৮ নম্বর কক্ষে দেওয়া হয় তখন সে ওই কক্ষের আবাসিকতা দাবি করে। তাকে বলা হয়েছে তুমি তো ৩০৮ এ থাকো এখন এখানে কেন? তুমি ওখানেই থাকো বলে তার জিনিস নিয়ে চলে যেতে বলি। ‘
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় বলেন, অভিযোগকারী শিক্ষার্থীকে সিট থেকে বের করার অভিযোগ মিথ্যা। কারণ সে ওই সিটে ওঠেইনি। আর আমরা কোনো আবাসিক ছাত্রকে হলে উঠতে বাধা দেইনি। আমরা সবসময়ই বৈধ শিক্ষার্থীদের হলে উঠতে সাহায্য করছি।
লালন শাহ হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। হল সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে বসে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ‘
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০২৩